ডেস্ক রিপোর্ট
জাতিসংঘের তহবিল সংকটের কারণে কঙ্গোতে চলমান শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশ পুলিশের ১৮০ সদস্যের একটি পুরো কন্টিনজেন্টকে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা ও সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ পুলিশের এই দলটি গত ২৬ আগস্ট কঙ্গোতে পৌঁছে প্রশিক্ষণ শেষে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানী কিনসাসায় দায়িত্ব পালন শুরু করে। দেড় মাসের মাথায়, গত ১৫ অক্টোবর থেকে তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। নভেম্বরের মধ্যেই দেশে ফেরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কন্টিনজেন্টে ৭০ জন নারী সদস্যও রয়েছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের ইউএন ডেস্কের অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, “এটা কোনো দেশের প্রতি বিশেষ সিদ্ধান্ত নয়, জাতিসংঘের ‘ডাউনসাইজিং নীতি’র অংশ। মিশনে অংশ নেওয়া সব দেশ থেকেই পুলিশ ও সেনা সদস্য সংখ্যা কমানো হচ্ছে।”
জাতিসংঘের সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট অর্ধেকে নেমে আসায় শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বড় ধরনের কাটছাঁট চলছে। এর ফলে প্রায় ১৩ থেকে ১৪ হাজার সেনা ও পুলিশ সদস্যকে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
তবে শান্তিরক্ষা মিশনে আগে কাজ করা কর্মকর্তা ও কূটনীতিকরা মনে করছেন, পুরো একটি কন্টিনজেন্ট ফেরত পাঠানো বাংলাদেশের কূটনৈতিক দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়। অবসরপ্রাপ্ত মেজর ও সাবেক কূটনীতিক এমদাদুল ইসলাম বলেন, “ডাউনসাইজিং সত্য, কিন্তু কেন শুধু বাংলাদেশের পুরো দল? এখানে যোগাযোগের ঘাটতি আছে। ভারত-পাকিস্তানের মতো দেশগুলোর ক্ষেত্রে তো এমন হয়নি। এটি আমাদের জন্য নেতিবাচক বার্তা।”
তিনি আরও বলেন, “জাতিসংঘের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও লবিং অপরিহার্য। আমরা জানতাম ডাউনসাইজ হতে পারে, তবু তৎপরতা ছিল না। এখন অন্য দেশগুলো এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে পারে।”
জাতিসংঘ শান্তি মিশনে দায়িত্ব পালন করা পুলিশের এক ডিআইজি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ডাউনসাইজিংয়ের সময় টিকে থাকতে হলে জাতিসংঘ, মিশন প্রধান ও প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে হয়। এখানে প্রস্তুতির ঘাটতি দেখা গেছে। পুরো কন্টিনজেন্ট ফেরত পাঠানো বাংলাদেশের ভাবমূর্তিতে ধাক্কা দেবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “মিশনে যারা যায়, তাদের মানবাধিকার ও পেশাগত যোগ্যতা যাচাই করা হয়। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার কারণে আমাদের ভাবমূর্তি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এটি রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার সুযোগ পেতে পারে কিছু দেশ।”
অন্যদিকে, পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, “এটা কোনো ফেরত পাঠানো নয়, বরং জাতিসংঘের নীতিগত ডাউনসাইজিং। কঙ্গোতে এখন হুমকি কম, তাই সেখানে সদস্য কমানো হচ্ছে। অন্য মিশনগুলোতে বাংলাদেশ এখনো অবস্থান করছে।”
প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ জানান, “এটি জাতিসংঘের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এখানে কূটনৈতিক ব্যর্থতার প্রশ্নই আসে না। অন্যান্য দেশ থেকেও ফোর্স কমানো হচ্ছে, শুধু আমাদের নয়।”
উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে আফ্রিকার নামিবিয়ায় প্রথম শান্তি মিশনে অংশ নেয় বাংলাদেশ পুলিশ। এরপর থেকে ২১ হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা বিশ্বজুড়ে ২৪টি দেশে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে কঙ্গো, দক্ষিণ সুদান ও মধ্য আফ্রিকার বিভিন্ন মিশনে বাংলাদেশের সদস্যরা কর্মরত রয়েছেন।
তবে এবার কঙ্গো মিশনে বাংলাদেশের পুরো কন্টিনজেন্ট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত দেশটির জন্য এক নতুন কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।