মশিউর রহমান
খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় গত শনিবার ও রবিবার (২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর) সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। রোববার রাতে সেনাবাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চালক মামুন হত্যাকে কেন্দ্র করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) মূল এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো দীঘিনালা ও রাঙামাটিতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা চালায় এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ওই ঘটনায় তিনজন নিহত হন এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে চলতি বছর ইউপিডিএফ পুনরায় বিভিন্ন এলাকায় কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালা এলাকায় এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত শয়ন শীলকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যদিও বিষয়টি বিচারাধীন, তবুও ইউপিডিএফের সহযোগী সংগঠন পিসিপি নেতা উখ্যানু মারমা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর ধারাবাহিকতায় বিক্ষোভ, মানববন্ধন, হরতাল ও অনলাইনে বাঙালিদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক প্রচার চালানো হয়।
২৬ সেপ্টেম্বর অবরোধ চলাকালে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং সেনা টহলদলের ওপর ইট-পাটকেল ছোড়া হলে তিনজন সেনা সদস্য আহত হন। সেনাবাহিনী পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সর্বোচ্চ সংযম দেখায়।
এরপর ২৭ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফ ও এর অঙ্গসংগঠনের কর্মীরা দাঙ্গার চেষ্টা চালায়। বাঙালি জনগোষ্ঠীসহ সাধারণ মানুষের ওপর গুলি, ভাঙচুর, অ্যাম্বুলেন্সে হামলা এবং সড়ক অবরোধের মাধ্যমে পরিস্থিতি অবনতির দিকে যায়। দুপুর নাগাদ ঘটনাটি সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে রূপ নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারি করে। সারারাত সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টায় উত্তেজনা দমন করা হয়।
২৮ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে গুইমারার রামসু বাজার এলাকায় পুনরায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ইউপিডিএফ কর্মীরা সেনা ও বিজিবি সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এসময় সেনাবাহিনীর তিন কর্মকর্তা ও সাত সদস্য আহত হন। রামগড় এলাকায় বিজিবির গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। একইসঙ্গে উঁচু পাহাড় থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলিবর্ষণ করে ইউপিডিএফের সশস্ত্র সদস্যরা। এতে অনেকে গুলিবিদ্ধ হন। তবে সেনা টহলদল অভিযানে গেলে তারা পালিয়ে যায়।
একই সময়ে বহিরাগত দুষ্কৃতকারীরা রামসু বাজারে অগ্নিসংযোগ করে এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হয়। বিকাল নাগাদ অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ইউপিডিএফ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো পরিকল্পিতভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে। নারী ও স্কুলশিক্ষার্থীদের জোর করে নাশকতায় যুক্ত করা হচ্ছে এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের অস্ত্রসহ এলাকায় আনা হচ্ছে। এমনকি ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে কাপ্তাইয়ের একটি চেকপোস্টে যাত্রীবাহী বাস থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
বিবৃতিতে সেনাবাহিনী বলেছে, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এর প্রমাণ সংরক্ষিত রয়েছে। সেনাবাহিনী সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, পার্বত্য অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা প্রয়োজন।
সবশেষে সেনাবাহিনী স্পষ্ট জানায়, সকল অপপ্রচার, মিথ্যা প্রচারণা ও উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও দেশের সার্বভৌমত্ব ও পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা সবধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।