ডেস্ক রিপোর্ট
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর দখলের অনুমতি দেবেন না। এমন সময়ে এই মন্তব্য এল, যখন ইসরায়েলের কিছু কট্টরপন্থী রাজনীতিক ওই অঞ্চলের ওপর সার্বভৌমত্ব দাবি করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করতে চাইছেন। তবে ট্রাম্প তাদের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, “আমি ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর দখলের অনুমতি দিতে পারি না। যথেষ্ট হয়েছে, এখনই থামা দরকার।”
এই মন্তব্যের ঠিক আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন। নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, তিনি দেশে ফিরে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবেন।
এর আগে পশ্চিমা কূটনীতিকদের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার জেরে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ইসরায়েলের পশ্চিম তীর দখলকে মেনে নিতে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর, এমন উদ্বেগ বাড়তে থাকে। এই পরিস্থিতিতে আরব ও ইউরোপীয় নেতারা সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করেন যেন ট্রাম্প এমন কোনো অবস্থান না নেন।
পশ্চিম তীর দখল নিয়ে নেতানিয়াহু নিজেই তার জোটসঙ্গীদের চাপের মুখে ছিলেন। এর ফলে আরব দুনিয়ার উদ্বেগ বেড়ে যায়। জাতিসংঘ অধিবেশনের সময় কয়েকজন আরব নেতা ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং তাকে হুঁশিয়ারি দেন—পশ্চিম তীর দখলের যেকোনো পদক্ষেপ ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল-সৌদ জানিয়েছেন, ট্রাম্প এই বার্তা ‘পরিষ্কারভাবে বুঝে নিয়েছেন’।
উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে পশ্চিম তীর ইসরায়েলের দখলে আসে। এরপর থেকে সেখানে একের পর এক ইহুদি বসতি গড়ে ওঠে। এই বসতিগুলো এখন এতটাই বিস্তৃত যে অঞ্চলটিকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। সম্প্রতি অনুমোদিত ‘E1 প্রকল্প’ পশ্চিম তীরকে পূর্ব জেরুজালেম থেকে আলাদা করে দেবে, যেটিকে ফিলিস্তিন তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে দাবি করে।
ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী ও ডানপন্থী জোটের প্রভাবশালী নেতা বেজালেল স্মোত্রিচ বলেন, “ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণা এখন পুরোপুরি বাতিল হয়ে গেছে।”
বর্তমানে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় সাত লাখ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী বাস করেন, যেখানে বাস করেন প্রায় ২৭ লাখ ফিলিস্তিনি। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এসব বসতিকে অধিকাংশ দেশ অবৈধ মনে করলেও, ইসরায়েল তাদের অবস্থানকে বৈধ বলে দাবি করে, একে ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় অধিকার এবং নিরাপত্তার অংশ হিসেবে দেখায়।
এদিকে, জাতিসংঘ অধিবেশন চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি ২১ দফা পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে, যার মূল লক্ষ্য গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটানো। প্রায় দুই বছর ধরে চলা এই সংঘাতে গাজায় ব্যাপক প্রাণহানি ও ধ্বংস দেখা গেছে।
মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ জানিয়েছেন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, মিসর, জর্ডান, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের নেতাদের সঙ্গে এই প্রস্তাব ভাগ করে নেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ইতোমধ্যে নেতানিয়াহু এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। গাজা নিয়ে একটি চুক্তি শিগগিরই হতে পারে বলে তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, “আমরা চাই জিম্মিরা ফিরে আসুক, মরদেহগুলো যেন ফেরত আসে, এবং অঞ্চলটিতে যেন শান্তি ফিরে আসে। আলোচনা ইতিবাচক হয়েছে।”
দীর্ঘমেয়াদী এই গাজা যুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, এ পর্যন্ত গাজায় ৬৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা জানিয়েছে, গাজার কিছু এলাকায় ইতোমধ্যেই দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।