
নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন আজ বাংলাদেশে গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন কর্তৃক প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সাবেক সরকারের নৃশংসতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ১,৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হতে পারে এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে। নিহতদের অধিকাংশই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া, নিহতদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ শিশু ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, এই সময়ের মধ্যে তাদের ৪৪ জন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের সাবেক সরকার এবং এর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো, পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সহিংস উপাদানগুলো ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ চলাকালীন গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত ছিল। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য ও অন্যান্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের দমন করতে একটি সরকারি নীতি অনুসরণ করা হয়েছিল। এতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচার গ্রেপ্তার ও আটক, এবং নির্যাতনের ঘটনা ঘটে, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল হতে পারে এবং যার আরও তদন্ত প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন কাজ করলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি প্রথমবার।
বিক্ষোভের মূল সূত্রপাত হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনঃস্থাপনের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের এক সিদ্ধান্ত থেকে। তবে এর পেছনে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দুর্নীতি ও প্রশাসনিক বৈষম্য ছিল, যা অর্থনৈতিক অসাম্যের সৃষ্টি করেছিল। সাবেক সরকার ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ধারাবাহিকভাবে সহিংসতা ব্যবহার করে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা চালিয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, “এই নৃশংস প্রতিক্রিয়া ছিল সাবেক সরকারের একটি পরিকল্পিত এবং সমন্বিত কৌশল, যা জনতার বিরোধিতার মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিল। রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নির্দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা যে সাক্ষ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করেছি, তা ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সহিংসতা এবং লক্ষ্যভিত্তিক হত্যাকাণ্ডের উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে। এসব ঘটনা মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর উদাহরণ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য ন্যায়বিচার এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা জরুরি।