সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপপ্রয়োগ এখনই বন্ধ করতে হবে

শেখ ওমর
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল গত ১০ আগস্ট ২০২৪ তারিখে নিজের প্রথম কার্যদিবসে বলেছিলেন, সন্ত্রাস বিরোধী আইন এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনে করা “মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাগুলো” দ্রুত প্রত্যাহার করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত এক মাসে এই ধরনের কোনো পদক্ষেপ অবশ্য দেখা যায়নি। সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯-এর অধীনে সারা দেশে দায়েরকৃত মামলাগুলো যথারীতি চলমান আছে—যদিও এই আইনে অভিযুক্তদেরকে জামিন প্রদানের হার আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।
বিচার প্রক্রিয়া শেষ না করে সরকার কিভাবে ও কিসের ভিত্তিতে সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯-এ করা “মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাগুলো” চিহ্নিত করবে, সেটিও গত এক মাসে স্পষ্ট হয়নি। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯-এ দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহার না করে কেবল “মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাগুলো” প্রত্যাহারের সরকারি সিদ্ধান্ত থেকে বোঝা যায় যে, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে প্রণীত এই আইনটি অন্তর্বর্তী সরকার বহাল রাখতে চায়।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দ্বারা ব্যাপকভাবে নিন্দিত এই “সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯” নামক আইনটি অন্তর্বর্তী সরকার বহাল রাখার কারণ সম্ভবত আইনটির ব্যাপারে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি। বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনগুলো হলো নাইন ইলেভেন পরবর্তী বিশ্বে মার্কিন-ব্রিটিশ নেতৃত্বাধীন তথাকথিত “ওয়ান অন টেরর”-এর বাই-প্রোডাক্ট। টুইন টাওয়ারে হামলার পরের মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে Terrorism (USA PATRIOT) Act, 2001 পাস করা হয়। তার পরের মাসে ব্রিটেনে জারি করা হয় Anti-terrorism, Crime and Security Act, 2001.
এই আইনগুলোর আদলে দেশে দেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রণয়ন করার জন্য মার্কিন-ব্রিটিশ চাপ তৈরি করা হয়। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ভারত এই ধরনের সন্ত্রাস বিরোধী আইন পাস করে। বাংলাদেশে তৎকালে ক্ষমতাসীন চার দলীয় জোট সরকারের উপরেও চাপ ছিল এই ধরনের সন্ত্রাসবিরোধী আইন তৈরি করার। কিন্তু বিএনপি জোট সরকার ওই আইন প্রণয়নে অগ্রসর হয়নি। বিএনপি জোটের উপর পশ্চিমা বিশ্বের নাখোশ হওয়ার এটি ছিল অন্যতম কারণ।
পরবর্তীতে মার্কিন-ভারতের ছত্রছায়ায় বাংলাদেশে মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকার ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাস বিরোধী অধ্যাদেশ, ২০০৮ জারি করে। ওয়ার অন টেরর-এ মার্কিন-ভারতের সহযোগী হিসেবে ২০০৯ বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসীন হয় আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ ওই সন্ত্রাস বিরোধী অধ্যাদেশ, ২০০৮-কে আইনে পরিণত করে। অর্থাৎ হুবহু সেই অধ্যাদেশের আলোকে সংসদে “সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯” পাশ করা হয়।
পরবর্তীতে মার্কিন-ব্রিটেন-ভারতের ছত্রছায়ায় ওয়ান-ইলেভেন ঘটিয়ে বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসে মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকার। পশ্চিমা বিশ্বের চাহিদা মোতাবেক ফখরুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার “সন্ত্রাস বিরোধী অধ্যাদেশ, ২০০৮” জারি করে। ওয়ার অন টেরর-এ মার্কিন-ব্রিটেন-ভারতের সহযোগী হিসেবে ২০০৯ বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসীন হয় আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে শেখ হাসিনার সরকার ওই “সন্ত্রাস বিরোধী অধ্যাদেশ, ২০০৮”-কে আইনে পরিণত করে। অর্থাৎ হুবহু সেই অধ্যাদেশের আলোকে সংসদে “সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯” পাশ করা হয়।
আইনটি ব্যাপকভাবে মানবাধিকার পরিপন্থী। সরকারবিরোধী মতপ্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে এই আইনটি সহজেই ব্যবহার করা যায়। মার্কিন, ব্রিটিশ ও ভারতীয় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আদলে বাংলাদেশে এই আইনটি বানাতে গিয়ে আইনটিতে অনেক গুরুতর অসঙ্গতি, দুর্বলতা ও ফাঁক-ফোকর রয়ে যায়। ফলে হাসিনা সরকার ২০১২ ও ২০১৩ সালে আইনটিতে দুটি সংশোধনী আনে। ২০১৩ সালের সংশোধনীর মাধ্যমে আইনটিতে পুলিশকে গ্রেফতার ও তদন্তের ব্যাপারে অধিকতর ক্ষমতা প্রদান করা হয়। ২০১৩ সালের ১১ জুনে এই সংশোধনী বিলটি সংসদে পাশ করার সময় বিরোধীদলীয় বিএনপি সাংসদগণ ওই সংশোধনীর তীব্র বিরোধিতা করেন এবং সংসদ থেকে ওয়াক আউট করেন। বিএনপি সাংসদগণ এই আইনকে “দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য আইন” হিসেবে চিহ্নিত করেন। তারা বলেছিলেন, সরকার শুধু গণআন্দোলন দমনের জন্য এই সংশোধনী এনেছে।
বিএনপি সাংসদদের ওই অভিযোগ অমূলক ছিল না। পরবর্তী ১১ বছরে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার এই সন্ত্রাসবিরোধী আইনটিকে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে। ২০১৩ সালের ওই সংশোধনীর মাধ্যমে “হিযবুত তাহরীর, বাংলাদেশ”-কে ওই আইনের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত নিষিদ্ধ সংগঠনের তালিকায় ফেলে দেয়। অথচ হাসিনা সরকার “হিযবুত তাহরীর, বাংলাদেশ”-কে কখনোই সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯-এর আওতায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনি। এই আইনের ১৮(১) ধারায় স্পষ্ট বলা আছে:
“এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, কোন ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কার্যের সহিত জড়িত রহিয়াছে মর্মে যুক্তিসঙ্গত কারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে।”
“হিযবুত তাহরীর, বাংলাদেশ”-কে নিষিদ্ধ করে হাসিনা সরকার কখনোই সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন জারি করেনি। হাসিনা সরকার অবশ্য গত ২২শে অক্টোবর ২০০৯ তারিখে একটি প্রেস নোটের “হিযবুত তাহরীর, বাংলাদেশ”-কে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। প্রেস নোটটিতে কোনো স্মারক নাম্বার ছিল না। তথাকথিত ওই নিষেধাজ্ঞার আদেশটি সরকারি গেজেটে প্রকাশ করা হয়নি এবং এতে কোনো এস.আর.ও নাম্বারও ছিল না। প্রেস নোটে কোনো আইনের উল্লেখও ছিল না। অর্থাৎ হাসিনা সরকার নিজেদের তৈরি সন্ত্রাসবিরোধী আইনটিকে পাশ কাটিয়ে “হিযবুত তাহরীর, বাংলাদেশ”-কে নিষিদ্ধ করেছিল এবং সম্পূর্ণ আইনবহির্ভুত প্রক্রিয়ায় দলটির নাম ২০১৩ সালের সংশোধনীর মাধ্যমে “সন্ত্রাস বিরোধী ২০০৯”-এর তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করে নিষিদ্ধ সংগঠনের তালিকাভুক্ত করেছিল।
ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের ওই প্রেস নোটে “হিযবুত তাহরীর, বাংলাদেশ”-এর কার্যক্রমকে “শান্তি-শৃঙ্খলা পরিপন্থী” ও “জননিরাপত্তার জন্য হুমকি” বলা হয়েছিল। অথচ ২০০০ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত “হিযবুত তাহরীর, বাংলাদেশ”-এর নামে কিংবা এর নেতাকর্মীদের নামে “শান্তি-শৃঙ্খলা পরিপন্থী” ও “জননিরাপত্তার জন্য হুমকি”-এর অভিযোগে কোনো মামলা দায়ের হয়নি কিংবা এ-ধরনের কোনো অভিযোগ কোনো আদালতে প্রমাণ হয়নি। সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯-এর ৬(১) ধারায় প্রদত্ত “সন্ত্রাসী কার্য”-এর সংজ্ঞায় বর্ণিত কার্যকলাপের সঙ্গে “হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশ”-এর কর্মকাণ্ডের দূরতম সম্পর্কও নেই। “হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশ” কখনোই সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়নি। সংগঠনটি কেবল লিফলেট-পোস্টার বিতরণ, সেমিনার, মিছিল ও সমাবেশের মতো আইনসম্মত রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো পালন করে। অথচ বেআইনিভাবে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ফ্যাসিস্ট সরকার তাদের কেন্দ্রীয় অফিসগুলো ভেঙ্গে দিয়েছিল। হাসিনা সরকার তার ফ্যাসিস্ট চরিত্রের কারণে “হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশ”-এর বিরুদ্ধে এই ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল।
নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর “হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশ”-কে আত্মপক্ষ সমর্থনের বা আইনের আশ্রয় লাভের সাংবিধানিক সুযোগ দেওয়া হয়নি। বরং নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করার সাথে সাথেই ফ্যাসিস্ট সরকার “হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশ”-এর তৎকালীন শীর্ষ নেতৃত্বকে গ্রেফতার করেছিল এবং বছরের পর বছর তাঁদেরকে কারাবন্দি রেখেছিল। “হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশ”-এর পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে আইনি প্রক্রিয়ায় চ্যালেঞ্জের সুযোগকেও ফ্যাসিস্ট সরকার নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করেছিল। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পুরো মেয়াদকালটিই ভিন্নমত দমন ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার এক কালো অধ্যায়। গত ৯ সেপ্টেম্বর (সোমবার) জাতীয় পরে ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে হিযবুত তাহরীর-এর আইনজীবীগণ জানান, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার প্রেক্ষিতে “হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশ” ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আরোপিত নিষেধাজ্ঞাটি প্রত্যাহারের জন্য সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে ।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে “হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশ”-এর ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। উক্ত নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের নাগরিকদের সংগঠন করার অধিকার, মতপ্রকাশের অধিকার, সমাবেশ করার অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারকে চূড়ান্তভাবে খর্ব করে—যা বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৮, ৩৯, ৩৭ ও ৪১ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন “হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশ”-এর ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার তীব্র বিরোধিতা করেছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের পরিচালিত মানবাধিকার সংগঠন “অধিকার”-এর অক্টোবর, ২০০৯-এর মানবাধিকার রিপোর্টে বলা হয়েছিল:

“Hizbut Tahrir in its various written statements and meetings has conveyed its dissent over terrorist activities and had been expressing its views under the fundamental rights guaranteed by the Constitution of Bangladesh… The banning of Hizbut Tahrir without showing any evidence goes against the traditional norms of normal and peaceful political activities and unmasks the undemocratic attitude of the Government and proves that the Government has taken a stand against the fundamental rights of the citizens, as guaranteed under Articles 37, 38 and 39 of the Constitution. Article 37 of the Constitution guarantees freedom of assembly, while Article 38 guarantees freedom of Association. Article 39 guarantees freedom of thought and conscience and speech. The act of banning an organization that has no proven link to any violence or any anti-state activity, contravenes the Constitution.”

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের চারদিন আগে গত ১ আগস্টে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী” ও “ছাত্রশিবির”-এর কার্যক্রমের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। সেই প্রজ্ঞাপন গত ২৮শে আগস্ট ২০২৪ তারিখে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আরেকটি প্রজ্ঞাপন দিয়ে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কিন্তু “হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশ” এখনো ন্যায়বিচার পায়নি। ফ্যাসিস্ট সরকারের ঘোষিত বেআইনি নিষেধাজ্ঞা ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের তফসিল থেকে “হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশ”-এর নামটি প্রত্যাহারের আবেদন বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন রয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যত্থান পরবর্তী মুক্ত বাংলাদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সকল ভিকটিমকে ন্যায়বিচার পাওয়ার দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে। এই মানবাধিকার বিরোধী আইনটি বাতিল করাই সঙ্গত। নতুবা অন্তত আইনটি অতি সীমিত আকারে ও যথাযথভাবে প্রয়োগের ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টার প্রথম কার্যদিবসে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ব্যাপারে দেওয়া প্রতিশ্রুতির দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

More From Author

বন্ধ মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল রুট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *