জলদস্যু ভারতের নির্লজ্জ পানি চুরি আর আমাদের সাবেক দালাল শাসকদের নতজানু নীরবতা

এম আলম
শিক্ষাবিদ ও গবেষক

ভারত বাংলাদেশকে একটি বাঁধ বেষ্টিত ব-দ্বীপে (Dam Locked Delta) পরিণত করেছে।

একটু সহজ করে বলি। ধরুন আপনি একটি সাইকেল বা বাইক নিয়ে যাচ্ছেন এবং একটি অন্ধ গলি পেলেন যেখান থেকে অন্য রাস্তায় যাওয়ার আর উপায় নাই। তখন আপনি বাধ্য হয়ে পথ পরিবর্তন করেন, তাই না?

নদীর বিষয়টা অনেকটা এরকম। নদী নিজস্ব গতিতে বহমান। তবে বিভিন্ন উপায়ে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহে বাঁধা দিয়ে গতিপথ বদলানো যায়। নদীর গতিপথ বদলে ফেলে প্রাকৃতিকভাবে বাংলাদেশের ন্যায্য পানি অবৈধভাবে ভারত তাঁর নিজের দিকে প্রবাহিত করছে যুগ যুগ ধরে। এ এক ভয়াবহ পানি চুরি!

শুধু তাই না, নদীর স্বাভাবিক গতিপথে ঋতুভিত্তিক বাঁধার সৃষ্টি করে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল লবণাক্ত এবং উত্তরাঞ্চল মরুভূমি করে ফেলা হয়েছে। নদীর গতিপথে এই বাঁধা সৃষ্টির সবথেকে ভয়াবহ উপায় হল বাঁধ নির্মাণ। ভারত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা-ই করেছে। তবে সরাসরি বাঁধ না বলে ভারত অনেক ক্ষেত্রেই পানি অপসারণমূলক এই স্থাপনাগুলোকে হাইড্রো-ইলেক্ট্রিক পাওয়ারপ্লান্ট, সুইচ গেট বা ইরিগেশন প্লান্ট নামে অভিহিত করেছে। তবে আসল উদ্দেশ্য একই; বাংলাদেশের পানি চুরি!

বাংলাদেশের ৪০৫টি নদীর মধ্যে ৫৪টি নদীর ভারতের সাথে আন্তঃসীমানা রয়েছে এবং মিয়ানমারের সাথে ৩টি। ম্যাপে দেখুন কিভাবে এই এই জলদস্যু ভারত বাংলাদেশ ঘিরে ৪৮টি পানি অপসারণমূলক স্থাপনা নির্মাণ করেছে। ভাবতে পারেন! ভারতের সাথে আন্তঃসীমানা থাকা ৫৪ টি নদীর মধ্যে ৩১ টি নদীরই পানি চুরি করছে ভারত। আর এটা প্রমাণিত ও সর্বজনবিদিত।

ব্রিটিশদের হুকুমের দালাল ইন্দিরা গান্ধী ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ শেষ করে ১৯৭৫ সালে। এই বাঁধের একটি অংশ পরীক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৫ সালে ৩০ (২১ এপ্রিল ১৯৭৫ থেকে ২১ মে ১৯৭৫) দিনের জন্য ভারতকে গঙ্গা হতে ৩১০-৪৫০ কিউসেক পানি অপসারণ করার অনুমতি দেয়। কিন্তু আজ ৪৯ বছরেও ভারতের ফারাক্কা ডাকাতি শেষ হয়নি। উত্তরাঞ্চল মরুভূমি হয়েছে ইতিমধ্যে। আজ এই ফারাক্কার মত আরও ৪৭ টি স্থাপনা আছে। এ এক নির্মম জলদস্যুতা! এ এক জল যুদ্ধ! এই যুদ্ধের মাধ্যমে ভারত আমাদের শুকিয়ে মারতে চায়, ডুবিয়ে মারতে চায়।

তো এখন কথা হল, বন্যা হলে সবাই একতার সাথে বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছি। বন্যা চলে গেলে কি আমরা ভারতের এই জলদস্যুতা ভুলে যাব? বাংলাদেশের তিন দিকে ভারত বাঁধ দিবে কেন? ভারত প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে দুর্বল করে এবং রেখে আমেরিকা-ব্রিটেনের স্যাটেলাইট স্টেট হিসাবে এই এলাকায় আঞ্চলিক শাসনের জায়গীরদারি চায়।

আশা করি এই নতুন বাংলাদেশে ভারতের দালালদের কোন জায়গা হবে না। আরো আশা করি যেসব নির্লজ্জ গণতান্ত্রিক শাসকেরা গত কয়েক যুগে আমাদের শোষণ করেছেন আর ভারত-ব্রিটেন-আমেরিকার পা চেটেছেন, তারা জেনে রাখেন, বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশে ভারতের জলযুদ্ধকে প্রতিহত করা হবে।

More From Author

বিএনপির সমাবেশে নেতা-কর্মীদের ঢল

২০২৪ এর মধ্যেই বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ: অর্থ উপদেষ্টা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *