
ডেস্ক রিপোর্ট
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের এক ভার্চুয়াল বক্তব্যের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সংগঠনের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, “বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আজ্ঞাবহ এই পলাতক কর্মকর্তার বক্তব্য পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ক্ষুব্ধ করেছে।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “পলাতক ও দুর্নীতিগ্রস্ত সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীরের এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অবাস্তব বক্তব্য পুলিশ সদস্যরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি। বিগত সরকারের আমলে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে প্রতিটি পুলিশ সদস্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আজ্ঞাবহ কারও সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করাকে পুলিশ সদস্যরা ঘৃণার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছেন।”
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেছেন সংগঠনের সভাপতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. মতিউর রহমান শেখ ও সাধারণ সম্পাদক ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান।
বিতর্কিত বক্তব্য ও পুলিশের প্রতিক্রিয়া
গত বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের অনুসারীদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নেন বেনজীর আহমেদ। শুক্রবার সেই বক্তব্যের বিভিন্ন অংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে পুলিশ ও প্রশাসনের অনেক সদস্যের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যোগাযোগ রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
ভার্চুয়াল আলোচনায় বেনজীর আহমেদ বলেন, “আওয়ামী লীগ যখন সংগঠিত হবে, তখন পুলিশের উপস্থিতি তাদের পাশে থাকবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।” তিনি আরও বলেন, “বিএনপি, এরশাদ সরকারের আমলে অনেক এমপি পুলিশের মধ্যে তাদের লোক ঢুকিয়েছিল। এসব লোক এখনও পুলিশে রয়েছে, যারা নিজেদের পার্টির সঙ্গে যুক্ত এবং রাজনৈতিক কাজে সক্রিয়।”
বেনজীর আহমেদের অতীত ভূমিকা
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদে দায়িত্ব পালন করেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দফতর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া সাত কর্মকর্তার মধ্যে ছিলেন বেনজীর আহমেদ, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, খান মোহাম্মদ আজাদ, তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, মো. জাহাঙ্গীর আলম ও মো. আনোয়ার লতিফ খান। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, “বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত। তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।”
এদিকে, বেনজীর আহমেদের সাম্প্রতিক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে পুলিশের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তার বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন।