
ইয়াসির আরাফাত,উত্তরা
রাজধানীর উত্তরা এলাকায় প্রকাশ্যে কিশোর গ্যাংয়ের হামলার শিকার হয়েছেন এক দম্পতি। সোমবার রাতে উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডে এই ঘটনা ঘটে। হামলার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাদা ও জলপাই রঙের শার্ট পরিহিত দুই যুবক ধারালো রামদা দিয়ে এক পুরুষ ও তার সঙ্গে থাকা এক নারীকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। প্রাণ বাঁচাতে ওই নারী হাত জোড় করে সন্ত্রাসীদের অনুরোধ করেন। কিন্তু হামলাকারীরা ক্ষান্ত না হলে তিনি নিজের জীবন বাজি রেখে স্বামীকে রক্ষা করতে অস্ত্রের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ান। পরে জানা যায়, ভুক্তভোগী দম্পতির নাম মকবুল ও ইফতি।
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন সাধারণ মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইফতির সাহসিকতার প্রশংসা চলছে, পাশাপাশি কিশোর গ্যাংয়ের এই সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন নেটিজেনরা।
হামলাকারীদের আটক ও গ্রেপ্তার
স্থানীয়রা হামলার সময় ধাওয়া দিলে বেশ কয়েকজন হামলাকারী পালিয়ে যায়। তবে দুইজনকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতায় উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে সোমবার রাতেই পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার দেখায়। আজ মঙ্গলবার আরও একজনকে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান জানান, হামলায় জড়িত ৭ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত মোবারক হোসেন (২৫), রবি রায় (২২) ও আলফাজ নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই কিশোর গ্যাংটি টঙ্গী এলাকার।
ঘটনার পেছনের কারণ
জাতীয় নাগরিক কমিটির দায়িত্বশীল সদস্য হাসান মঈন জানান, ভুক্তভোগী মকবুল জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য তাহসিন রিয়াদের বন্ধু। ঘটনার পর তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হামলাকারীদের আটকের বিষয়ে স্থানীয়দের সহায়তা করেছেন।
হাসান মঈন আরও জানান, কিশোর গ্যাংটি টঙ্গী এলাকার এবং তারা সেক্টরের ভেতরে উচ্চশব্দে মোটরসাইকেলের হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছিল। এতে দম্পতি মকবুল ও ইফতি রিকশা থেকে প্রতিবাদ জানান। তাদের প্রতিবাদের পর গ্যাংটি আরও সদস্য জড়ো করে এবং হামলা চালায়।
কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা
স্থানীয়রা জানান, টঙ্গী এলাকার এই কিশোর গ্যাং সন্ধ্যার পর উত্তরা ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্পটে সংঘবদ্ধ ছিনতাই চক্রের সদস্য হিসেবে পরিচিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এই নৃশংস ঘটনার পর জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসন অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।