
নিজস্ব প্রতিবেদক
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় দেশের ২৬ বিশিষ্ট নাগরিক তীব্র ক্ষোভ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তারা অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে নির্মমভাবে বাড়িটি ধ্বংস করা হয়েছে। তারা বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে ঘটনা–পরবর্তী বিবৃতি দিয়ে এই দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
শুক্রবার (ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তারা বলেন, ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনার দায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরই অনেকাংশে বর্তায়। তারা এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘৫ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়িটি ক্রেন ও বুলডোজার ব্যবহার করে নির্মমভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে এই কাজটি করা হয়েছে, যা একটি সভ্য দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের গভীরভাবে মর্মাহত, স্তম্ভিত ও লজ্জিত করেছে। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।’
বিবৃতিদাতারা আরও বলেন, ‘এমন লজ্জাজনক ঘটনার নিন্দা ও ধিক্কার জানানোর উপযুক্ত ভাষা আমাদের জানা নেই। আমরা ঘটনাটির তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি করছি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কার কাছে এই দাবি জানাব? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হয় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে, নতুবা সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় ছিল। তাদের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পরও তাদের এই নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা অপরাধের সহযোগিতা করার সমার্থক।’
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘কোনো ধরনের গণ–উত্তেজক সহিংসতা বা মব ভায়োলেন্স কেবলমাত্র ফ্যাসিবাদী শক্তিকে উৎসাহিত করবে। বিগত পতিত সরকার ও তার সহযোগীরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে নানা নাশকতার পরিকল্পনা করেছে। এখন দেশে আইনের শাসন নেই বলে দেশ-বিদেশে যে প্রচার চালানো হচ্ছে, এই ঘটনা তার হাতকে আরও শক্তিশালী করবে। তাই পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর অসত্য ভাষণ বা উসকানিমূলক বক্তব্যকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে আইনের শাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা চলবে না। যা ঘটেছে, তার সঠিক তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনার দায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরই অনেকাংশে বর্তায়। সরকারের পক্ষ থেকে ঘটনা–পরবর্তী বিবৃতি দিয়ে এই দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। কোনো দেশের ঐতিহাসিক নিদর্শন, স্থান বা স্থাপনা সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব সেই দেশের রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের। ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান বা স্থাপনা যার নামেই জড়িত থাকুক না কেন, তার সুরক্ষা সভ্য সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘পৃথিবীর সব দেশেই ঐতিহাসিক স্থান ও কীর্তিগুলো যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে সুরক্ষা করা হয়। অনেক নির্মম শাসকের বাসভবনও সংরক্ষিত থাকে, যাতে মানুষ তাদের কীর্তি ও অপকীর্তি সম্পর্কে জানতে পারে। আমরা ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দাবি করছি এবং এর সুষ্ঠু বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবহেলাসহ যারা দায়ী, তাদের জবাবদিহি ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি ধ্বংসের সঙ্গে স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং এটি গণ–উত্তেজক সন্ত্রাসের প্রদর্শন হিসেবে দেখা দিয়েছে, যা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তরুণদের একাংশকে কোনো দেশি বা বিদেশি অপশক্তি বিপথে পরিচালিত করার চেষ্টা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা জরুরি।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন সুলতানা কামাল, রাশেদা কে চৌধূরী, আনু মুহাম্মদ, খুশী কবির, পারভীন হাসান, ইফতেখারুজ্জামান, শামসুল হুদা, সারা হোসেন, সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সুব্রত চৌধুরী, নুর খান, শাহনাজ হুদা, নোভা আহমেদ, জোবাইদা নাসরীন, মোহম্মদ সেলিম হোসেন, শাহ-ই-মবিন জিন্নাহ, জাকির হোসেন, রেজাউল করিম চৌধুরী, মনীন্দ্র কুমার নাথ, সাঈদ আহমেদ, মিনহাজুল হক চৌধুরী, আশরাফ আলী, শাহাদত আলম, রেজাউল হক, হানা শামস আহমেদ ও মুক্তাশ্রী চাকমা।