
ইয়াসির আরাফাত
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান হামলা ও নিপীড়নের ঘটনা বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। মুসলিম বিশ্বে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ থাকলেও, বেশিরভাগ মুসলিম রাষ্ট্রের শাসকরা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এতে প্রশ্ন উঠেছে— ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়াতে মুসলিম নেতারা কেন দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছেন না?
বিশ্লেষকদের মতে, বেশিরভাগ মুসলিম দেশ আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিল সমীকরণের কারণে সরাসরি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে চায় না। পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোটবদ্ধ থাকা, অনেক মুসলিম দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী কয়েকটি দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মরক্কো ও সুদানের মতো দেশগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে। এসব দেশের সরকার এখন ফিলিস্তিনের পক্ষে সরাসরি কোনো কঠোর অবস্থান নিতে অনাগ্রহী।
বিশ্ব রাজনীতিতে শক্তিধর দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা মুসলিম দেশগুলোর নীরবতার অন্যতম কারণ। মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করতে চায়। অন্যদিকে, কিছু দেশ সামরিক নির্ভরতার কারণে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে দ্বিধাগ্রস্ত।
তুরস্ক ও ইরান ইসরায়েলের নীতির সমালোচনা করলেও, তারা এখনও সীমিত কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব দেশ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং সামরিক চাপের শঙ্কায় সরাসরি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা কঠোর নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটছে না।
মুসলিম বিশ্বের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ এবং রাজনৈতিক বিভক্তিও ফিলিস্তিন ইস্যুতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যকার দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব, তুরস্ক ও আরব দেশগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, এমনকি মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ফিলিস্তিন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গঠনের পথে অন্তরায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে মুসলিম বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ না হলে, ইসরায়েল তার সামরিক ও কূটনৈতিক আধিপত্য আরও সুসংহত করবে। তুরস্ক, ইরান, কাতারের মতো দেশগুলো বিভিন্ন সময়ে ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানালেও, তা এখনও প্রতীকী ও কূটনৈতিক নিন্দার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ফিলিস্তিনের জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মুসলিম দেশগুলোর উচিত কেবল নিন্দা জানানোর পরিবর্তে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। তবে বাস্তবিক দিক থেকে, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বাধার কারণে শিগগিরই এমন কোনো পদক্ষেপ আসবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।