নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনা যেন একটি যুদ্ধে পরিণত হয়েছে!

খন্দকার সামসুন্নাহার চামেলী

সম্পাদকীয়:
জুলাই অভ্যুর্থান পরবর্তী বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। খাদ্যশস্য, জ্বালানি, এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি শুধুমাত্র নিম্নবিত্ত নয়, মধ্যবিত্ত শ্রেণির উপরত্ত তীব্র প্রভাব ফেলেছে এবং সংসার ঠিক মতো চালাতে না পেরে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের ক্ষোভ দিনকে দিন বেড়েই চলছে।বাজারে প্রতিদিনের দৈনন্দিন কেনাকাটা যেন একটি যুদ্ধে পরিণত হয়েছে, যেখানে প্রতিটি পণ্য কেনার সিদ্ধান্ত কঠিন হয়ে উঠছে।

মূল্যবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে বিভিন্ন কারণ। প্রথমত মুদ্রাস্ফীতি ও সরবরাহ চেইনের সংকট। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধি থেকে শুরু করে খাদ্যপণ্যের কৃতিম সংকট, সবকিছুই অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রভাব ফেলছে। দ্বিতীয়ত, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন খাতে নানা প্রতিবন্ধকতা ও নীতিগত দুর্বলতা। কৃষিখাতের অপ্রতুল প্রণোদনা এবং শিল্প খাতের অদক্ষ ব্যবস্থাপনা এই সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে।

এই পরিস্থিতির প্রভাব সুদূরপ্রসারী। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি মানুষের জীবনযাত্রার মানকে সরাসরি নিচের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পুষ্টির অভাব, শিক্ষা খাতে ব্যয় কমানো এবং মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থনীতির অবস্থা সংকুচিত হচ্ছে, কারণ মানুষ তাদের আয় শুধু বেঁচে থাকার জন্য ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছে।

এই সংকট মোকাবিলায় সরকারের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের মধ্যে থাকতে পারে যেমন মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করা, সরবরাহ শৃঙ্খলা উন্নত করা, কৃষি ও উৎপাদন খাতে প্রণোদনা বৃদ্ধি, বৈদেশিক বাণিজ্য নীতি সংস্কার , সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা সম্প্রসারণ

বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু অর্থনৈতিক নীতিমালা নয়, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সামাজিক সংহতিও প্রয়োজন। জনগণকে আশ্বাস দেওয়া এবং সংকট সমাধানে সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি। সরকার যদি দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে, তবে এ সংকট কেবলই সাময়িক হতে পারে। অন্যথায়, এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সাকারের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।

একটি দেশের প্রকৃত উন্নয়ন তখনই সম্ভব, যখন তার জনগণ মৌলিক চাহিদা পূরণে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে। বর্তমান সরকারকে এই সংকট থেকে উত্তরণের মাধ্যমে তার দায়িত্বের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। একমাত্র সমন্বিত উদ্যোগই আমাদের এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে।

More From Author

“কিভাবে একটি দেশের অর্থনীতি শুষে নেওয়া হলো”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *