নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) একটি ক্রমবর্ধমান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যারা কুকি-চিন নৃগোষ্ঠীর জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি তুলেছে।
২০০৮ সালে নাথান বমের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) মূলত বান্দরবান ও রাঙামাটিতে বসবাসকারী বম, পাংখুয়া, লুসাই, ঘুমি, মো এবং খিয়াং নৃগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় কাজ করত। তবে, তাদের দাবিগুলি দীর্ঘদিন পূরণ না হওয়ায় ২০১৬ সালে এটি কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টে রূপান্তরিত হয় এবং সশস্ত্র শাখা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) গঠন করে।
কেএনএফ বর্তমানে কুকিল্যান্ড নামে একটি পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছে। তাদের লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের ইনার লাইন পারমিট (আইএলপি) ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, যা ওই অঞ্চলে অ-আদিবাসীদের প্রবেশের জন্য বিশেষ অনুমতির প্রয়োজনীয়তা আরোপ করত। কেএনএফের দাবি, তাদের এই প্রচেষ্টা আদিবাসীদের ভূমি এবং সংস্কৃতির সুরক্ষার জন্য।
সরকারি তথ্য অনুসারে, কেএনএফের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে সহিংসতার মাত্রা বেড়েছে। ২০২৪ সালের ২ এপ্রিল বান্দরবানের রুমা বাজারে একটি ব্যাংকে হামলা চালিয়ে তারা বিপুল অর্থ ও অস্ত্র লুট করেছে। সশস্ত্র সংঘর্ষের ফলে কেএনএ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে, যাতে সেনাবাহিনীর সদস্য হতাহত হয়েছেন। যদিও কেএনএফ তাদের বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৩,০০০ বলে দাবি করে, প্রকৃত সংখ্যা ৫০-৬০ জন বলে ধারণা করা হয়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবদুল হামিদ বলেন, কেএনএফের কর্মকাণ্ড কেবল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সীমাবদ্ধ নয়, এটি ভারত, মিয়ানমার এবং চীনের মতো দেশেও সক্রিয়। তাদের কার্যক্রম বিশ্ব রাজনীতির বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
তিনি আরও বলেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর বাস্তুচ্যুতি মোকাবিলায় ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনার প্রয়োজন। কেএনএফের হুমকি মোকাবিলায় সশস্ত্র বাহিনী, সুশীল সমাজ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে একটি সমন্বিত কৌশল গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে কেএনএফের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি এবং তাদের সশস্ত্র তৎপরতা এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।