
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান এলাকায় যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় সংঘটিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত দুই সন্ত্রাসী ও অস্ত্র উদ্ধার সংক্রান্ত ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা এবং অস্ত্র আইনে পৃথকভাবে এই মামলা দুটি দায়ের করে পুলিশ।
মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার মাহমুদ হাসান জানান, মামলায় মোট ২২ জনকে আসামি করা হয়েছে। নিহত দুই সন্ত্রাসী মিরাজ হোসেন এবং মো. জুম্মনকে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নিহত মিরাজ হোসেন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নুরাবাদ গ্রামের বাসিন্দা এবং জুম্মন শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার দেশভুয়াই গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ছিল এবং এর আগেও তারা গ্রেপ্তার হয়েছিল। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তারা কুখ্যাত কবজি কাটা আনোয়ার গ্রুপের সদস্য হিসেবে এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল।
অভিযানের বিস্তারিত
বুধবার মধ্যরাতে যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় ১২ থেকে ১৫ জন সন্ত্রাসী চাঁদ উদ্যানের লাউতলায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। পুলিশ সূত্র জানায়, যৌথ বাহিনী অভিযানে গেলে সন্ত্রাসীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পাল্টা গুলিতে মিরাজ এবং জুম্মন নিহত হয়, এবং পাঁচজনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজন হলেন—ভোলার মো. হোসেন, লালমোহনের মিরাজ, মমিনুল, মেহেদী, এবং বরিশালের মুলাদী উপজেলার আল আমিন। এদের সবার বিরুদ্ধে মাদক, ছিনতাই ও অস্ত্র মামলার অভিযোগ রয়েছে।
অস্ত্র ও প্রমাণ উদ্ধার
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, অভিযানে একটি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি এবং একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, মাদক ও সন্ত্রাসবিরোধী এই ধরনের অভিযান চলমান থাকবে।
স্থানীয়দের আতঙ্ক ও প্রতিক্রিয়া
চাঁদ উদ্যান এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নিহত মিরাজ এবং জুম্মনের কারণে এলাকার সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আতঙ্কে ছিল। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদ উদ্যান, লাউতলা, এবং সাতমসজিদ হাউজিং এলাকায় ছিনতাই, ডাকাতি এবং হত্যার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সন্ধ্যার পর তারা নিরাপদে চলাফেরা করতে ভয় পেত।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা নূরজাহান বেগম বলেন, ‘‘রাতে অভিযান চলাকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বারবার অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিলেও সন্ত্রাসীরা পাল্টা গুলি চালায়।’’
কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, মোহাম্মদপুরে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তারা নিয়মিত ছিনতাই, চুরি, এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। কোনো বাসিন্দা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযানের পর থেকে এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং সন্ত্রাস দমনে অভিযান অব্যাহত থাকবে।