
নিজস্ব প্রতিবেদক
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতা নাহিদ ইসলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। আগামী শুক্রবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ থেকে আত্মপ্রকাশ হতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক হিসেবে তিনি দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। তবে দলের শীর্ষস্থানীয় পদ ও কমিটির সদস্যদের তালিকা নিয়ে এখনও চলছে টানাপোড়েন। সব পক্ষকে সন্তুষ্ট করতে কমিটির আকার বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বাংলামটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির (জানাক) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের আত্মপ্রকাশের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বড় জমায়েতের মাধ্যমে রাজপথের শক্তি প্রদর্শন করা হবে। নাহিদ ইসলাম এই সভায় অংশ নেননি, তবে তিনি শিগগিরই দলে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে। গতকাল প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর নাহিদ ইসলাম বলেন, “ছাত্র-জনতার শক্তিকে সংহত করতে সরকারে থাকার চেয়ে রাজপথে আমার ভূমিকা বেশি হবে।”
সূত্রে জানা গেছে, আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সব পক্ষকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। তবে সরকারের কোনো প্রতিনিধি থাকবে না। কমিটির আকার প্রাথমিকভাবে ১৫০ সদস্যের হতে পারে, যা পরে বাড়িয়ে ৩০০ করা হতে পারে। কমিটিতে সদস্য সচিব পদে আখতার হোসেনের দায়িত্ব পাওয়া প্রায় নিশ্চিত।
দলের নাম এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে নামের সঙ্গে “নাগরিক”, “জনতা” বা “বিপ্লবী” শব্দ যুক্ত হতে পারে। প্রতীক হিসেবে মুষ্টিবদ্ধ হাত, কলম বা শাপলা ফুলের প্রস্তাব রয়েছে। দলের পরবর্তী সম্মেলন হতে পারে দু’বছর পরে, তাই আহ্বায়ক কমিটিই আগামী সংসদ নির্বাচনে দলকে নেতৃত্ব দেবে।
শীর্ষ পদে কে থাকবেন?
মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্র পদে হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন বলে শোনা গেলেও তা এখনও নিশ্চিত নয়। জানাক আহ্বায়ক মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদকে শীর্ষ চার পদের যে কোনো একটিতে দায়িত্ব দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে নাসীরুদ্দীন এই সমীকরণ নাকচ করেছেন এবং বলেছেন, “এখনও কিছুই চূড়ান্ত নয়।”
দলের শীর্ষ নেতাদের বেশিরভাগই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র, যা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নেতা বলেন, “গ্রামীণ এলাকার প্রতিনিধিত্ব কম হচ্ছে।” এছাড়া শীর্ষ পদে নারী ও সংখ্যালঘু নেতাদের প্রতিনিধিত্ব নিয়েও বিতর্ক চলছে।
আদর্শিক দ্বন্দ্ব অব্যাহত
সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে গঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্রশক্তি, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা নতুন দল গঠনে একত্র হয়েছেন। তবে আদর্শিক দ্বন্দ্ব এখনও রয়ে গেছে। সব পক্ষ আহ্বায়ক পদে নাহিদ ইসলামকে সমর্থন করলেও অন্যান্য শীর্ষ পদ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।
নতুন ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে নতুন ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি ঘোষণা করবেন। সংগঠনটির আহ্বায়ক হচ্ছেন আবু বাকের মজুমদার, সদস্য সচিব জাহিদ আহসান, মুখ্য সংগঠক তাহমীদ আল মুদ্দাসসীর চৌধুরী এবং মুখপাত্র রাশিদুল ইসলাম রিফাত।
সংগঠনের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে “স্টুডেন্টস ফার্স্ট, বাংলাদেশ ফার্স্ট”। আবু বাকের মজুমদার বলেন, “আমাদের ছাত্র সংগঠন লেজুড়বৃত্তিক হবে না। নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক থাকবে না।”
নাহিদ ইসলামের পদত্যাগ
গতকাল দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবনে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, “জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমাকে ছাত্র-জনতার কাতারে থাকা উচিত। গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা এবং গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার শক্তিকে সংহত করতে রাজপথে আমার ভূমিকা বেশি হবে।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফেসবুকে নাহিদ ইসলামের প্রশংসা করে লিখেছেন, “নাহিদ একদিন প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন।”
নাহিদ ইসলামের পদত্যাগ ও নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আগামী দিনগুলোতে এই দল দেশের রাজনীতিতে কী ভূমিকা রাখে, তা সকলের জন্য পর্যবেক্ষণের বিষয় হয়ে থাকবে।