
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “আগে বিচার, তারপর অন্য কাজ। ধর্ম যার যার, বাংলাদেশ সবার। আমরা এ দেশে মেজরিটি-মাইনরিটির ধারণা একেবারেই মানি না। বাংলাদেশে যারাই জন্মগ্রহণ করেছেন, তারা সবাই এ দেশের মর্যাদাবান ও গর্বিত নাগরিক। ইসলাম কারও ওপর জোর খাটানোর অধিকার রাখে না। অন্য কোনো ধর্মের ওপর জোর খাটাতে পারে না, যদি সেটি ধর্ম হয়ে থাকে।”
আজ শনিবার সকালে কক্সবাজারে জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, “সমাজে সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু বলে যুদ্ধ লাগিয়ে রাখা হয়েছিল। যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন ধর্মের ভাই-বোনদের নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের সম্পদ গ্রাস করা হয়েছে, জায়গা-জমি দখল করা হয়েছে, ইজ্জতের ওপর হাত দেওয়া হয়েছে, ক্ষেত্রবিশেষে তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এর দায় চাপানো হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর ওপর।”
ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে কোথায় কোথায় জামায়াতের কর্মীরা এসব অপকর্ম করেছে, তা সুস্পষ্টভাবে নাম-ঠিকানা দিয়ে আমাদের জানান। আপনাদের কথা দিচ্ছি, আমরা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করব। আমরা নিশ্চিত- এসব অপকর্মের সঙ্গে আমাদের সহকর্মীরা জড়িত নয়।”
আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার উদ্দেশে জামায়াত আমির বলেন, “তোমাদের নেতৃত্বে আমরা ছিলাম। সাড়ে ১৫ বছর আমরা আমাদের নেতৃত্বে আন্দোলন করেছি, কিন্তু স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে পারিনি। কিন্তু তোমাদের নেতৃত্বে জাতি শেষ আঘাতটি ফ্যাসিবাদের ওপর দিয়েছিল এবং সফল হয়েছিল।”
আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড প্রসঙ্গে জামায়াত আমির আরও বলেন, “অনেকে নিজেরাই কৃতিত্ব দাবি করেন— আমি মাস্টারমাইন্ড, অমুক ভাই মাস্টারমাইন্ড। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, মহান রব্বুল আলামিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়েছে। এখানে কোনো মাস্টারমাইন্ড নেই।”
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, “বিশ্বের অনেক দেশ স্বাধীনতার পর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আমরাও সেই প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু স্বাধীন বিচারব্যবস্থা আমরা এখনো পাইনি। আওয়ামী লীগের শাসনামলে আমাদের ১১ জন শীর্ষ নেতাকে ঠান্ডা মাথায় বিচারের নামে হত্যা করা হয়েছে। আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাস করি না, তবে সব হত্যার বিচার চাই। বিশেষ করে ২০২৪ সালের গণহত্যার বিচার অবশ্যই হতে হবে। আগে বিচার, তারপর অন্য কাজ। বিচার না হলে শহিদদের আত্মা কষ্ট পাবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাব এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করব। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রক্ষায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
জামায়াত আমিরের এই বক্তব্যে সম্মেলনে উপস্থিত কর্মীরা উৎসাহিত হন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবিতে জোরালো সমর্থন জানান।