
নিজস্ব প্রতিবেদক
দীর্ঘ সাত বছর পর বৃহৎ পরিসরে বর্ধিত সভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলীয় নেতাকর্মীদের ভোটকেন্দ্রিক পরিকল্পনা ও সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল সাড়ে ১০টায় কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সভার উদ্বোধন করা হয়। দলীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা এতে উপস্থিত ছিলেন। সভায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন।
খালেদা জিয়ার বক্তব্য
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রিয় সহকর্মীবৃন্দ,
আসসালামু আলাইকুম।
আজ দীর্ঘ ছয় বৎসর পর আপনারা আবার একসাথে ফ্যাসিষ্টমুক্ত বাংলাদেশে একত্রিত হতে পেরেছেন। সে জন্য আল্লাহর কাছে হাজার শোকরিয়া আদায় করছি।
দীঘ ফ্যসীবাদ বিরোধী সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন এবং সম্প্রতি জুলাই-আগষ্টের ফ্যসীবাদী শাসকদের নির্মম, ভয়াবহ দমননীতির কারণে গণহত্যায় যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। যারা আহত হয়েছেন তাদের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক সমবেদনা।
আমি চিকিৎসার কারণে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করলেও আমি সব সময় আপনাদের পাশেই আছি।
এ দীর্ঘ পনের বছর গণতন্ত্রের জন্য, আমার মুক্তির জন্য আপনারা যে নিরন্তর সংগ্রাম করেছেন এবং আমাদের অসংখ্য সহকর্মী প্রাণ দিয়েছেন, জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং প্রায় সোয়া লক্ষ মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়ে এখনও আদালতের বারান্দায় ন্যায় বিচারের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আপনাদের এ ত্যাগ শুধু দল নয়, জাতি চিরকাল স্মরণে রাখবে।
দেশ আজ এক সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। আপনাদের এবং ছাত্রদের সমন্বিত আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিষ্ট শাসকেরা বিদায় নিয়েছে। একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। তাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা—রাষ্ট্র মেরামতের নূন্যতম সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা।
আমার অবর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং আপনাদের সকলকে সঙ্গে নিয়ে নিরন্তর কাজ করে দলকে সুসংহত করেছেন। আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি আপনারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে আরো উজ্জীবিত হয়ে আগামী নির্বাচনে সাফল্যের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে আমাদের এতদিনকার সংগ্রাম, আত্মত্যাগ বিফলে যায়। আমাদের সব সময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সেই উক্তি মনে রাখা দরকার—“ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়”।
বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ, বিশেষ করে তরুণ সমাজ আজ এক ইতিবাচক গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। ক্ষুদ্র, সংকীর্ণতা ভুলে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের কাজ করতে হবে। এখনও ফ্যাসিষ্টদের দোসররা ও বাংলাদেশের শত্রুরা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্জনকে নস্যাৎ করার জন্য গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। ইস্পাত-কঠিন ঐক্যের মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দিতে হবে।
গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। আসুন, আমরা আগামীদিন গুলোতে শহীদ জিয়ার স্বপ্নের আধুনিক, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করি এবং এত ত্যাগের বিনিময়ে প্রাপ্ত এ অর্জনকে সুসংহত এবং ঐক্যকে আরো বেগবান করি।
আমি যুক্তরাজ্য থেকে অসুস্থ অবস্থায় আপনাদের আহ্বান জানাতে চাই—আসুন, জনগণকে সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে পূর্বের ন্যায় আন্দোলন, সংগ্রাম ও রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব প্রদানে আরও ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত ভাবে গড়ে তুলি।
আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে আহ্বান রাখতে চাই, আসুন, প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ নয়, পারস্পারিক ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে আমরা সকলে মিলে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটি বাসযোগ্য, উন্নত ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করি।
দলীয় সূত্র জানায়, সভায় আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় কৌশল, সাংগঠনিক কার্যক্রমের শক্তিশালীকরণ এবং আন্দোলন-সংগ্রামের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া, দলের ভবিষ্যৎ রূপরেখা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলেও নেতারা জানান।
বর্ধিত সভার আলোচনার সারসংক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা পরবর্তী সময়ে দলীয় ফোরামে উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।”